এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে পালালেন আ. লীগ নেতার আত্মীয়!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় রেলওয়ে থেকে বন্দোবস্ত (লিজ) পাওয়া জায়গা বুঝে নিতে এসে মারধরের শিকার হয়ে এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গেছেন আবুল বাশার মানিক নামের এক ব্যক্তি। মানিক আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মো. তাকজিল খলিফা কাজলের ভাগ্নি জামাই। এ সময় মো. রাসেল নামের আরেক ব্যক্তি মারধরের শিকার হন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আখাউড়া উপজেলার মোগড়া এলাকার রেলওয়ের সেতুর কাছে একটি পুকুর লিজ ছিল মানিকের নামে।

আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুকুরটি ভরাট করে কাজের সুবিধার্থে ব্যবহার করে। কয়েক মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে যায়।

পরবর্তীতে এলাকাবাসী জায়গাটি খেলার মাঠ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। তবে মানিক লিজের বিপরীতে নিয়মিত পাওনা পরিশোধ করতে থাকেন।

চলতি অর্থ বছরের পাওনাও (লিজমানি) তিনি পরিশোধ করে রাখেন। তবে জায়গাটি তিনি দখলে নিতে পারছিলেন না। কয়েক গ্রামের মানুষ এটিকে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল রেলওয়ে খেলার মাঠ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ব্যবহার করতে থাকে।

বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুরে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা দীপঙ্কর তঞ্চ্যঙ্গা জায়গাটি মানিককে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আসেন।

এ সময় ওই জায়গায় ফুটবল খেলা চলছিল। খেলা চলা অবস্থাতেই এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন ওই কর্মকর্তা। এ সময় ‘মাঠ চাই, মাঠ চাই’ দাবিতে স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজন এ মাঠে খেলাধুলা করে বলে জানানো হয়। পাশাপাশি ব্যক্তি লিজ বাতিল করে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দিতে দাবি জানানো হয়।

এক পর্যায়ে উত্তেজিত লোকজন মানিকের ওপর চড়াও হন। রাসেল নামে একজনও তখন মারধরের শিকার হন। জায়গা বুঝিয়ে দিতে আসা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে সেখান থেকে সরে যায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মানিকের লোভ মূলত ওই জায়গায় থাকা বালু। তিনি চাচ্ছেন জায়গাটি দখলে নিয়ে নিচে থাকা বালু বিক্রি করবেন এবং আগের মতো পুকুর বানাবেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক আইনমন্ত্রীর প্রভাব দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা তাকজিল খলিফা জায়গাটির উত্তর অংশ থেকে বালু উঠিয়ে বড় গর্ত করে ফেলেছিলেন।

মো. ছায়েব আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, মোগড়া রেলওয়ে সেতুর পাশের একটি বিশাল পুকুর বহু বছর আগে মানিক নামের একজন লিজ আনেন। নতুন রেললাইন নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্ট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জায়গাটিতে মালামাল রাখে। এরই মধ্যে মানিক মিয়ার লিজ বাতিল হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায় কাজ শেষে ফের লিজ দেওয়া হবে। কিন্তু এ বিষয়ে রেলওয়ের কাছে আবেদন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তিনি আরো বলেন, ‘সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাকজিল খলিফা কাজলের আত্মীয় মানিক প্রভাব খাটিয়ে লিজ আনার চেষ্টা করেন। সম্প্রতি এখানে থাকা মাঠের নামের সাইনবোর্ডও তিনি ফেলে দেন। এলাকার মানুষ কোনোভাবেই এটাকে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করতে দেবে না।’

অবশ্য আবুল বাশার মানিকের দাবি, তিনি রেলওয়ের নিয়ম মেনে খাজনাও পরিশোধ করেছেন। এখানে কৃষিকাজ করার ইচ্ছা তার। কিন্তু কিছু লোক জায়গাটিতে যেতে দিচ্ছে না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা জায়গাটি বুঝিয়ে দিতে আসে।

About RemixBd

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *